“সম্পাদকদের বিবৃতি? এটা আবার কেমন ব্যাপার? সম্পাদকদের কি মিলিতভাবে বিবৃতি দেয়ার প্রয়োজন পড়ে? তাদের হাতেতো পত্রিকাই রয়েছে। তারা তো নিজেদের ইচ্ছেমত নিজেদের পত্রিকাতেই নিজেদের কথা লিখতে পারেন। তারা সম্পাদকীয় লিখতে পারেন, স্বনামে নিবন্ধ (signed article) লিখতে পারেন, প্রথম পাতায় তাদের লেখা শীর্ষ শিরোনামে গুরুত্ব দিয়ে ছাপতে পারেন। তাদের বিবৃতি দেয়ার তো কোন প্রয়োজন পড়ে না। অতীতে এমন ধরনের বিবৃতি সম্পাদকরা কখনও দিয়েছেন কিনা মনে করতে পারছি না। তাদের যৌথ বক্তব্য এসেছে সম্পাদক পরিষদের পক্ষ থেকে। সেগুলিও ছিল মূলত তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে। এভাবে বিবৃতি দেয়া কি সম্পাদকদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে? এটা তাদের দায়িত্ব না দায়?” ৫০ সম্পাদকের বিবৃতি দেখে সোশাল মিডিয়ায় এমনই মন্তব্য করেছেন বর্ষিয়ান সাংবাদিক মনজুর আহমেদ। তিনি আরও লিখেছেন, ” বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতি ছিল আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নানা বিষয়ে দেয়া তাদের বিবৃতি আমাদের উদ্বেলিত করত, মনোবল তৈরি করত। সেই ষাটের দশক থেকে দেখে আসছি সমাজে শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত নীতিনিষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের সাহসী ভূমিকা। মানুষের বাক স্বাধীনতাকে যখন রুদ্ধ করে দেয়া হয়েছে, মত প্রকাশের অধিকার হরণ করা হয়েছে, সংবাদপত্রের টুঁটি চেপে ধরা হয়েছে, মানবাধিকারকে ভূলুন্ঠিত করা হয়েছে, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলার সমস্ত নাগরিক অধিকারকে কেড়ে নেয়া হয়েছে, তখন সেই দুর্যোগ মুহূর্তে এগিয়ে এসেছেন বুদ্ধিজীবীরা। তাদের বিবৃতিতে কেঁপে উঠেছে শাসক শ্রেণীর দুর্গ। বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতি ছিল আমাদের কাছে অমূল্য সম্পদ, আমাদের অনুপ্রণা।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার প্রক্রিয়া স্থগিতের দাবির প্রতিবাদে দেশের ১৭১ বিশিষ্ট নাগরিক, বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবী বিবৃতি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮ জন প্রতিথযশা সাংবাদিক রয়েছেন। তারা হলেন মনজুরুল আহসান বুলবুল, নাইমুল ইসলাম খান, আবেদ খান, হারুন হাবীব, শ্যামল দত্ত, অজয় দাসগুপ্ত, মনজুরুল ইসলাম ও মোজাম্মেল বাবু। আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী সাংবাদিকের সংখ্যা সহস্রাধিক। টেলিভিশন, পত্রিকার মালিকানা , বড় পদে চাকরি ও প্লট-ফ্লাট প্রাপক সাংবাদিকের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন মাত্র ৮ জন। এতে সরকারের শীর্ষ মহল নাখোশ হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে সাংবাদিক নেতারা আরও বিবৃতি আসছে বলে নীতিনির্ধারক মহলকে আশ্বস্ত করেছেন।
এর ১ দিন পরই ৫০ সম্পাদক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যাপারে যৌথ বিবৃতি দেন। অবশ্য উল্লেখিত ৮ সাংবাদিকের নাম ৫০ জনের তালিকাতেও রয়েছেন।
ড. ইউনূসকে নিয়ে বিশ্বনেতাদের চিঠির প্রতিবাদ ৫০ সম্পাদকের
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান বিচার প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে খোলা চিঠি দেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৬০ জন বিশিষ্ট নাগরিক। ওই চিঠির প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৫০টি পত্রিকার সম্পাদক। শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৮শে আগস্ট কয়েকজন নোবেল বিজয়ী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী এবং সুশীল সমাজের অনেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেয়া একটি খোলা চিঠিতে বাংলাদেশের শ্রম আইনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান মামলা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এটি একটি সার্বভৌম দেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ, আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৪(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন। এ ধরনের চিঠি প্রদানের মাধ্যমে তারা অনৈতিক, বেআইনি ও অসাংবিধানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার ওপর হস্তক্ষেপ করেছেন বলে আমরা মনে করি। এ ধরনের বিবৃতি বা খোলা চিঠি আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং বাংলাদেশের আইনে শ্রমিকদের প্রদত্ত অধিকার সংক্রান্ত বিধানাবলীর সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
বিবৃতিতে বলা হয়, আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত এবং নোবেল বিজয়ীদের এ ধরনের বিবৃতি এবং চিঠি অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অনৈতিক। একজন অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না এবং বিচার করা যাবে না- এমন দাবি ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পরিপন্থি। আমরা মনে করি, তারা মামলা সম্পর্কে পুরোপুরি না জেনে এমন দাবি করেছেন। তাই আমরা তাদের অথবা তাদের প্রতিনিধি এসে মামলায় ড. ইউনূসকে আদৌ হয়রানি করা হচ্ছে কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
বিবৃতিতে ৫০টি পত্রিকার সম্পাদক বলেন, একই চিঠিতে বাংলাদেশের গণতন্ত্র এবং নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে যে ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে, তা স্বাধীন-সার্বভৌম একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল।
মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের জনগণ যে কোনো মহলের এ ধরনের অবমাননাকর, অযাচিত ও বেআইনি হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই মেনে নেবে না। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা এবং শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়ে সম্মান প্রদর্শনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
বিবৃতিদাতারা হলেন- ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, আজকের পত্রিকার সম্পাদক গোলাম রহমান, ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, সমকালের সম্পাদক আলমগীর হোসেন, যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, ইউএনবি সম্পাদক ফরিদ হোসেন, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ইমেরিটাস এডিটর নাঈমুল ইসলাম খান, সংবাদ সম্পাদক আলতামাশ কবির, পিপল্স টাইম সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, ডেইলি সান সম্পাদক রেজাউল করিম লোটাস, বাংলাদেশ জার্নাল সম্পাদক শাহজাহান সরদার, আমাদের নতুন সময় সম্পাদক নাসিমা খান মন্টি, বাংলাদেশ বুলেটিন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রতন, আজকালের খবর সম্পাদক ফারুক আহমেদ তালুকদার, কালবেলা সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, বাংলাদেশ পোস্ট সম্পাদক শরীফ শাহাবুদ্দিন, জনকণ্ঠ সম্পাদক শামীমা এ খান, সময়ের আলো ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কমলেশ রায়, প্রতিদিনের বাংলাদেশ সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, দেশ রূপান্তর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোস্তফা মামুন, ভোরের ডাক সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, দৈনিক বাংলা ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত, আলোকিত বাংলাদেশ ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শামীম সিদ্দিকী।
এ ছাড়া সংবাদ সারাবেলা সম্পাদক আব্দুল মজিদ, সংবাদ প্রতিদিন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রিমন মাহফুজ, বাংলাদেশের আলো সম্পাদক মফিজুর রহমান খান বাবু, ঢাকা টাইমস সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন, সকালের সময় সম্পাদক নূর হাকিম, আমার বার্তা সম্পাদক মো. জসিম, স্বাধীন বাংলা সম্পাদক আখলাকুল আম্বিয়া, আজকের দর্পণ সম্পাদক এসএম নূরে আলম সিদ্দিকী, লাখো কণ্ঠ সম্পাদক ফরিদ বাঙ্গালী, বাংলাদেশ সমাচার সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান, প্রথম কথা সম্পাদক কিশোর আদিত্য, দ্যা সাউথ এশিয়ান টাইমস সম্পাদক দীপক আচার্য্য, আজকের সংবাদ সম্পাদক আবু সাঈদ, দর্পণ প্রতিদিন সম্পাদক আতিকুর রহমান চৌধুরী, আলোর বার্তা সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, ডেইলি ইভিনিং নিউজ সম্পাদক মো. সেলিম, অগ্রসর সম্পাদক মোস্তফা হোসেন চৌধুরী, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নাজমুল হক সরকার, গণমুক্তি সম্পাদক শাহাদাত হোসেন শাহীন, প্রতিদিনের সংবাদ সম্পাদক মো. সাইদুল ইসলাম, ডেইলি সিটিজেন টাইমস সম্পাদক নাজমুল আলম তৌফিক, কান্ট্রি টুডে সম্পাদক হেমায়েত হোসেন ও মুখপাত্র সম্পাদক শেখ জামাল।
