সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংবিধানে থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব

রাজনীতি ডেস্ক   |   বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   77 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

সংবিধানে থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্ভব

পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখনও সংবিধানসম্মত বলে মনে করেন বক্তারা। বুধবার বিএনপি আয়োজিত এক সেমিনারে তাঁরা বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের সংক্ষিপ্ত রায়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেহেতু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়নি, তাই আগামী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতেই পারে।

সেমিনারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বাধ্য করতে হবে। এর মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার যেন প্রতিফলন ঘটাতে পারি। নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলনই একমাত্র পথ। জাতির সামনে এর কোনো বিকল্প নেই।

গুলশানে সিক্স সিজেন হোটেলে ‘পঞ্চদশ সংশোধনীর সাংবিধানিকতা : নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখনও সংবিধানসম্মত’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ইকতেদার আহমেদ। সেমিনারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে আইনের বিভিন্ন দিক ব্যাখ্যা করা হয়।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার। তবে সর্বোচ্চ আদালতের সংক্ষিপ্ত রায়ের পর্যবেক্ষণে আগামী দুটি সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। ওই সময় আদালতে এ মামলায় যাঁদের অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু), তাঁদের বেশিরভাগই তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে মত দেন। এ ছাড়া বিচারকদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতেই এ রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তড়িঘড়ি সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলোপ করে।

প্রবন্ধে বলা হয়, উচ্চ আদালতের রায় ও পর্যবেক্ষণকে পাশ কাটিয়ে এ সংশোধনী আনা হয়, যা আইনের দৃষ্টিতে সঠিক হয়নি। তাছাড়া বিচারপতির অবসরে যাওয়ার এতদিন পর রায় প্রকাশ করতে পারেন কিনা– সেই যুক্তিও তুলে ধরা হয়। এখানে সংক্ষিপ্ত রায়কে পূর্ণাঙ্গ রায়ে পরিবর্তন করে অন্যায় করা হয়েছে। এ ছাড়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার আগে এবং পরবর্তী আইনি সুযোগ না দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার একতরফাভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বতিল করে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

সেমিনারে আইনজ্ঞ বলেন, সমঝোতার মাধ্যমে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সরকার ও বিরোধী দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের নজির এ দেশে আছে। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে গণআন্দোলনে তৎকালীন সরকারের পতন হলে নির্বাচন কার অধীনে হবে– এ নিয়ে সংকট দেখা দেয়। তখন সব দল মিলে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সময়ের প্রধান বিচারপতিকে সেই সরকারের প্রধান করা হয়, যা সংবিধানে ছিল না। পরে ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের পর অন্তর্বর্তী সরকারকে সংবিধানে বৈধতা দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালেও সব রাজনৈতিক দলের মীমাংসিত ইস্যু– তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজন করা হয়। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা থাকলে আলোচনায় বসে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব।

এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, ২০০৬ সালে জাতীয় সংসদে ওই সময়ের বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সংস্কার করার বিষয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন। ২০০৭ সালেও সংস্কারের কথা বলেন তিনি। ওই সময় তিনি এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকেই কার্যকরীর কথা বলেছিলেন।
নির্দলীয় সরকারের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এ শীর্ষ নেতা বলেন, আজকে এ বিষয়ে কোনো বিতর্ক নেই। আজকে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে। তারা পরিবর্তন চায় এবং তারা এই সরকারকে সরাতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকলে তাঁরা নির্বাচনে যাবেন না। এই সরকারের অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না।

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের সঞ্চালনায় সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, গণফোরামের অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিকল্পধারার অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, সাবেক সচিব ইসমাইল জবিহউল্লাহ, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সেমিনারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লা বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আহমেদ আজম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ জে মোহাম্মদ আলী, অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ হোসেন আলাল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, জাগপার খন্দকার লুতফর রহমান, বিএলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদাসহ পেশাজীবী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকজন কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন।

Facebook Comments Box

Posted ১১:৪৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২২ জুন ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com