রবিবার ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার

জাতীয় ডেস্ক   |   শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   54 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দৃঢ় অঙ্গীকার

হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসায় ভাষাশহীদদের স্মরণ করেছে জাতি। একই সঙ্গে গোটা জাতির কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে শহীদদের স্বপ্নের বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদমুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ার দৃঢ় অঙ্গীকার।
গতকাল শুক্রবার সারাদেশে পালিত হয়েছে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতন-পরবর্তী বাংলাদেশে এটিই ছিল প্রথম শহীদ দিবস।
এদিন ভোর থেকেই দেশের সব পথ যেন মিশে যায় শহীদ মিনারে। মায়ের ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে জয়ী বীর বাঙালি জাতি বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করে তার গর্বিত পূর্বসূরিদের। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সবাই সারিবদ্ধভাবে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে ভাষার জন্য আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শহীদ মিনারের বেদিগুলো ভরে ওঠে ফুলে ফুলে। এ সময় সবার কণ্ঠে ছিল অমর একুশের কালজয়ী সেই গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি…।’

গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছোঁয়ার আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীর সারি দেখা যায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। একুশের প্রথম প্রহরে সেখানে ভাষাশহীদদের প্রতি পৃথকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা। রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। এর পর রাত ১২টা ১২ মিনিটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। ভাষাশহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সরকারের উপদেষ্টা, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনার, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার, কূটনীতিক ও বিদেশি মিশন প্রধান, পুলিশের আইজি, অ্যাটর্নি জেনারেল, ডিএমপি কমিশনার, আনসার মহাপরিচালক, ডিজিএফআই মহাপরিচালক, বিজিবি মহাপরিচালক, র‌্যাব মহাপরিচালক ও এনএসআই মহাপরিচালক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও অমর একুশে উদযাপন কমিটির সদস্যরাও শহীদ বেদিতে ফুল দেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে প্রধান বিচারপতি সাংবাদিকদের বলেন, বাঙালি জাতিসত্তার একটি প্রাথমিক স্তম্ভ একুশ। একাত্তর-পরবর্তী রাষ্ট্র গঠনের মৌলিক এবং অন্যতম অনুপ্রেরণা একুশ।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ওই এলাকা ত্যাগ করলে সর্বস্তরের জনগণের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার খুলে দেওয়া হয়। রাতভর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাধারণ মানুষ পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে ভাষাশহীদদের স্মরণ করেন। রাতেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও সদস্য সচিব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

গতকাল ভোর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণে মানুষের ঢল নামে। প্রভাতফেরি ও শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বে অংশ নেন শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ সব বয়সী নারী-পুরুষ। কেউ পরিবার, কেউবা বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে এসেছিলেন। কেউ এসেছেন শোকের রং কালো পাঞ্জাবি ও শাড়ি পরে। কেউ হাতে ফুল নিয়ে, কেউবা মাথায় লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা বেঁধে। লাল পাড়ের শাড়ি, লালরঙা পাঞ্জাবি আর শিশুদের গালে ‘অ আ ক খ’ আঁকা একটি ভিন্ন আবহ তৈরি করে। সবার কণ্ঠে ছিল ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি…’ গানটি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা সর্বস্তরের মানুষের সারি আরও দীর্ঘ হয়। দুপুর পর্যন্ত শ্রদ্ধা নিবেদনের পর্ব চলেছে।

সকাল ৮টায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে রিজভী বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা অম্লান। যদি আবারও কোনো ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটে, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের দামাল ছেলেদের, এদেশের জনগণকে আবারও রাজপথে লড়াইয়ে নামতে উদ্বুদ্ধ করবে।
ফুল নিয়ে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে এসে তাহসিন আলম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রথমবার শহীদ মিনারে এসে আমি উচ্ছ্বসিত। স্বৈরাচারের পতনের পর নতুনভাবে বাংলাদেশকে উপলব্ধি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী আব্দুর রশিদ বলেন, বাংলা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন ভাষাশহীদরা। তাদের শ্রদ্ধা জানানো আমাদের সবারই দায়িত্ব।
সেমন্তী দাস সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন শহীদ মিনারে। তিনি বলেন, বাচ্চাদের এসব না দেখালে তাদের ভেতরে দেশপ্রেম জন্মাবে না। সে জন্য তাদের নিয়ে এসেছি।
একুশের প্রথম প্রহর ও শুক্রবার দিনভর আরও শ্রদ্ধা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি, বাসদ, জাগপা, যুবদল, শ্রমিক দল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, জাসাস, তাঁতী দল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বিএফইউজে, ডিইউজে, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) এবং উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন দল, সংগঠন ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

আরও যেসব আয়োজন
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী শিশু একাডেমির প্রধান ফটকের সামনে উন্মুক্ত সড়কে শহীদ স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উদীচীর সহসভাপতি মাহমুদ সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সহসভাপতি প্রবীর সরদার, সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে প্রমুখ। আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে পরিবেশিত হয় গান, আবৃত্তি, নৃত্য ও পথনাটক।
এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে দোয়া মাহফিল ও ভাষাশহীদদের কবর জিয়ারত করেছে ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।

Facebook Comments Box

Posted ৪:০৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com