মঙ্গলবার ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৮ ব্যাংকে ১৯ হাজার কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতি

অর্থনীতি ডেস্ক   |   মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   89 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

৮ ব্যাংকে ১৯ হাজার কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতি

নানা ছাড়ের কারণে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ব্যাপক কমলেও প্রভিশন বা নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতি আগের মতোই আছে। গত ডিসেম্বর শেষে সরকারি-বেসরকারি ৮ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়ায় ১৯ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। তিন মাস আগে সেপ্টেম্বর শেষে ১৯ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা ঘাটতি ছিল। তবে ঘাটতির তালিকায় থাকা রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংকের প্রভিশন ডিসেম্বরে উদ্বৃত্ত ছিল। আর ঘাটতির তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে বিদেশি মালিকানার ব্যাংক আল-ফালাহ।
ঋণের শ্রেণিমান বিবেচনায় ব্যাংকগুলোর মুনাফা কিংবা শেয়ারহোল্ডার মূলধন থেকে একটি অংশ আলাদা করে রাখতে হয়, যাকে প্রভিশন বলা হয়। আমানতকারীদের অর্থের নিরাপত্তা দিতে ব্যাংকগুলোর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে এ ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। খেলাপি ঋণ বাড়লে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। আর প্রভিশন ঘাটতি বাড়লে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি বেড়ে যায়। বর্তমানে অশ্রেণিকৃত ঋণের ধরন অনুযায়ী দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন রাখতে হয়। আর খেলাপি ঋণের প্রথম পর্যায় ‘সাব স্ট্যান্ডার্ড’ ঋণে রাখতে হয় ২০ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায় বা ‘ডাউটফুল’ ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ৫০ শতাংশ। আর ‘মন্দ’ মানে শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় শতভাগ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতে ৮৪ হাজার ১৫৪ কোটি টাকা প্রভিশন রাখার কথা ছিল। তবে সংরক্ষণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। এর মানে প্রয়োজনের তুলনায় ১১ হাজার ৯ কোটি টাকা সামগ্রিক ঘাটতি হয়েছে। তিন মাস আগে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা কোনো ব্যাংক লভ্যাংশ দিতে পারে না। আবার ঘাটতি থাকলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ওই ব্যাংকের চার্জ বেশি লাগে। এসব কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ছাড় দিয়ে আর্থিক বিবরণী ভালো দেখানোর সুযোগ দিচ্ছে। প্রভিশন ঘাটতি থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে বিলম্বে ঋণ পরিশোধ বা ডেফারেল সুবিধার কারণে আর্থিক বিবরণীতে দেখাতে হচ্ছে না। এতে করে বিনিয়োগকারী, আমানতকারী এবং শেয়ারহোল্ডাররা অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকটির আসল চিত্র জানতে পারছে না। যে কারণে বিশেষজ্ঞদের অনেকে এ ধরনের সুবিধা দেওয়াকে ‘অস্বচ্ছ’ বলে থাকেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী জনতা ব্যাংক ডিসেম্বর শেষে ১ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা প্রভিশন উদ্বৃত্ত দেখিয়েছে। এক বছর আগে ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল ১০ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। তিন মাস আগেও ঘাটতি ছিল ৫৯৯ কোটি টাকা। প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা ৮ ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক। মালিক পক্ষের হস্তক্ষেপ নিয়ে আলোচিত ব্যাংকটির ডিসেম্বর শেষে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৬১৮ কোটি টাকা। তিন মাস আগে অবশ্য ঘাটতি ছিল ৭ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। পর্যায়ক্রমে বেসিক ব্যাংকের ৪ হাজার ৫৩৬ কোটি, অগ্রণী ব্যাংকের ৪ হাজার ৪২২ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ২ হাজার ৮১৫ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৩৪৪ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৭১ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৩৯ কোটি এবং বিদেশি মালিকানার ব্যাংক আল-ফালাহ ব্যাংকের ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকার প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। মোট ঋণের যা ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর শেষে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর মানে তিন মাসে খেলাপি ঋণ কমেছে ১৩ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। আইএমএফের ঋণের অন্যতম শর্ত ২০২৬ সালের মধ্যে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নামাতে হবে। আর বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ আনতে হবে ৫ শতাংশের নিচে। ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৬ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা বা ২০ দশমিক ২৮ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকে ৫৬ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা বা ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ।

Facebook Comments Box

Posted ১২:২৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com