নিজস্ব প্রতিবেদক | শনিবার, ২৭ মে ২০২৩ | প্রিন্ট | 354 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
পাশ্চাত্য দেশগুলোতে থার্টিফার্স্ট নাইট এত জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করা হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।আমেরিকাতে থার্টিফাস্ট ডিসেম্বরে প্রচন্ড ঠান্ডা এবং কখনো কখনো বরফও বর্ষন হতে দেখা যায় ।তার পরেও টাইম স্কোয়ারে মানুষের ভীড়ের কমতি থাকে না ।অস্ট্রেলিয়া থেকে আমার নেফুই এসেছিল ২০১৫ সালে তার ফ্যামিলীসহ থার্টিফাস্ট নাইটে বল পড়া দেখার জন্য। সেই সুযোগে আমাদের যাওয়া হয়েছিল সেখানে ।বিশাল আয়োজনের মাধ্যমে ইংরেজি প্রথমবর্ষকে স্বাগত জানাই ।দীর্ঘদিন বাংলাদেশ থেকে দূরে অবস্থান করলেও আমরা বাঙ্গালীরা কি ভূলতে পেরেছি আমাদের বাংলা নববর্ষকে?
পহেলা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন,তথা বাংলা নববর্ষ ।দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয় ।ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙ্গালীরাও এ উৎসবে অংশ নিয়ে থাকে ।সে হিসেবে এটি বাঙ্গালীদের একটি সর্বজনীন লোক উৎসব হিসেবে বিবেচিত ।গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে ১৪ই অথবা ১৫ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়ে থাকে ।বাংলা সালের প্রবর্তন করেন মোঘল সম্রাট আকবর এবং তাঁরই শাসনকালে প্রথম পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হয় ।বাংলার বাঘ এ,কে,এম ফজলুল হক পহেলা বৈশাখকে ছুটির দিন ঘোষণা করেছিলেন ।
বৈশাখকে নিয়ে বাংলার কবি,লেখকেরা যুগে যুগে কালজয়ী রচনা উপহার দিয়েছেন।
এসো হে বৈশাখ এসো এসো-পরম আদরে ডাক দিয়ে কাছে টেনে নিচ্ছেন গানের মাধ্যমে।বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছা বাক্য শুভ নববর্ষ ।ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির অধিকাংশই এদিন থেকেই তাদের ব্যবসায়িক হিসেবের নতুন খাতার উদ্বোধন করে ,যার পোশাকি নাম হালখাতা।যা এখনও কিছু কিছু অঞ্চলে প্রচলিত আছে ।
আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা নিয়ে বৈশাখের আগমন হলেও চৈত্রের রুক্ষতাকে দূরে সরিয়ে দিয়ে সমগ্র জীবকুলের জীবনে স্বস্তি নিয়ে আসে বৈশাখ ।’চৈত্রীর হাত ধরে বৈশাখী আলপনা,মন পলাশি রংয়ে হয় যে উন্মনা ।’ কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডবলীলার পাশে পাশে ঝড়ে পড়ে যাওয়া আম কুঁড়াতে যে সুখ তা ছোটকালের কবিতাটি আমরা কম বেশী সবাই পড়েছি।কাজেই এটি যে আনন্দের ঋতু সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই ।
বৈশাখী ঝড়ের মতো বৈশাখ উৎসবকে কেন্দ্র করে কিছু কিছু মানব চরিত্রেও তান্ডবলীলা পরিলক্ষিত হয় ।আমেরিকাতে বৃহত্তম সময় পার করেছি পুক্যাপসীতে।সেখানে ছোট একটি বাঙ্গালী কমিউনিটি আছে ।সিদ্ধান্ত হলো পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হবে এবং বাচ্চাদের দিয়ে এবারে উপস্থাপনার আয়োজন।এর পরিপ্রেক্ষিতে আমার রড় সন্তান প্রত্যয়কে মনোনিত করা হলো ।প্রত্যয় তখন বাংলা ভাষায় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র এবং তারই সাথে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী মায়েশা নামে আর একজনকে নেয়া হলো ।প্রত্যেক দিন মহড়া শুরু হলো ।ভালই লাগছিল ওদেরকে।হঠাৎ অনুষ্ঠানের আগের দিন এক ব্যক্তি বলে উঠল ওরা ভালো বাংলা বলতে পারছে না ,সুতরাং ওদের দিয়ে হবে না ।যে বাচ্চারা স্কুল শেষে হোমওয়ার্ক শেষ করে প্রত্যেকদিন রিহার্সাল করে এবং রিহার্সালের শেষের দিন এরকম একটি উদ্ভট কথা কোন চরিত্রের মানুষ বলতে পারে ভাবুনতো?পৃথিবীর বৃহত্তম রাষ্ট্রে বাস করেও মনটাকে বৃহত্তম করতে পারে নাই ।শেষ পর্যন্ত কার্যকর করতে পারে নাই ঐ ব্যক্তিটি আমার প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে।সেই একই ব্যক্তিটি এক পিকনিকেও আর একপ্রকার নীচুমনের পরিচয় দিয়েছিল। দৌড় প্রতিযোগীতায় প্রত্যয় ফাস্ট হয়েছিল অনেকখানি দূরত্বেই ছিল দ্বিতীয়জন ।কিন্তু উনি দ্বিতীয় জনকেই ফাস্ট বানিয়ে প্রত্যয়কে দ্বিতীয় বানিয়ে ফেললো খুব সহজে ।এসব কথা একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিলাম,লিখতে বসে মনে পড়ে গেল ।যাক বৈশাখী উৎসব নিয়ে লিখতে বসেছি,এবারে ১৪ই এপ্রিল ২০২৩ পহেলা বৈশাখ রোজার মধ্যে হওয়াতে স্বাভাবিকভাবেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যোগ দিতে পারে নাই ।কিছু সংখ্যক মুসলমান যোগ দিয়েছিল।রোজার মাস মুসলিমদের জন্য ইবাদতের মাস।ধর্মপ্রাণ মানুষ এ মাসে আল্লাহ্ ধ্যানে মগ্ন থাকে ।অমুসলিমদের কাছে তার গুরুত্ব না থাকলেও মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের কাছে এর গুরুত্ব অপরিসীম ।তাই তো এবারে পহেলা বৈশাখ নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তের সৃষ্টি হয়েছিল নিউইয়র্ক সিটিতে ।যদিও আমরা জানি যে,ধর্ম যার যার, উৎসব সবার ।
সম্মিলিত বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে ২১মে রবিবার ২০২৩ পিএস ৬৯,জ্যাকসন হাইটসে।বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল সময়ের জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী বিন্দু কণা।এ উপলক্ষে ৩০শে এপ্রিল রবিবার চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি দেলোয়ার ভাইয়ের বাসায় প্রথম মহড়া শুরু হয় ।৭ই মে দ্বিতীয় মহড়া একই স্থানে হয়েছিল ।প্রথম দিন উপস্থিত থেকে আনন্দ উপভোগ করেছিলাম ।ব্রঙ্কসে অবস্থিত বাফা আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ৬ই মে শনিবার ২০২৩ । এসব উৎসবে সাজসজ্জা দেখে বোঝা মুশকিল বাংলার মাটিতে না প্রবাসে?
সম্রাট বা শাসক যে উদ্দেশ্যেই পহেলা বৈশাখ চালু করুক না কেন,এখন তা বাঙ্গালী সর্বজনীন উৎসব হয়ে উঠেছে ।পহেলা বৈশাখে ভোর থেকে শুরু করে মধ্য রাত পর্যন্ত রাস্তা-ঘাট,পার্ক-মেলা প্রাঙ্গনে যে লক্ষ্য লক্ষ্য নারী-পুরুষ,আবাল বৃদ্ধ -বনিতা একত্রিত হয়ে উৎসবে মেতে উঠে ,তাতে থাকে না কোন জাত-ধর্ম বা ধনি-গরীবের পরিচয় ।দেখে মনে হয়,যেন কোন সুদূর দেশ থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে কোন ধর্মীয় সংষ্কৃতিতে নয়,বাঙালী মেতেছে তার শেকড়ের উৎসবে।তাই তো বরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আশা কবিতার মতো বলতে চাই -—
‘ধন নয়,মান নয়,কিছু ভালোবাসা
করেছিনু আশা ।’
Posted ৪:২৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৭ মে ২০২৩
nykagoj.com | Monwarul Islam