রবিবার ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উনবাঙালের বই মেলায় ছিল প্রাণের আমেজ

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ০২ মার্চ ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   98 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

উনবাঙালের বই মেলায় ছিল প্রাণের আমেজ

 

মহান শহীদ দিবস তথা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে শিল্প—সাহিত্য সংগঠন উনবাঙাল প্রথমবারের মতো নিউইয়র্কে তিনদিনব্যাপী বইমেলার ২১—২৩ ফেব্রুয়ারি জ্যামাইকাস্থ ইলহাম একাডেমীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের অমর একুশে বই মেলার সঙ্গে সময়ের সঙ্গতি রেখে আয়োজিত এ মেলার উদ্বোধন করেন প্রবীণ সাংবাদিক ও কথা সাহিত্যিক মনজুর আহমদ। মেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজ গ্রুপের কর্ণধার ও আজকাল সম্পাদক শাহ নেওয়াজ। এবারের মেলার শ্লোগান ছিল ‘পৃথিবী জুড়ে বাঙলী, বাঙালীর পৃথিবী’।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি বিকেল চারটায় র্যালীর মাধ্যমে মেলার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়। জ্যামাইকার ১৬৯ স্ট্রীট ও হিলসাইড এভিনিউ থেকে শুরু হয়ে ১৬৫ স্ট্রীট ও ৮৭ রোডস্থ মেলা প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। এরপর বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন সাংবাদিক মনজুর আহমদ। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা শেষে প্রতীকি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান অনুষ্ঠানে অতিথি ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ সময় অমর একুশ ও জাগরণের গান পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি শাহ নেওয়াজ ছাড়াও মেলা কমিটির আহ্বায়ক ফখরুল আলম, সদস্য সচিব আহসান হাবিব উনবাঙাল—এর প্রতিষ্ঠাতা কবি ও লেখক কাজী জহিরুল ইসলাম, টাইম টেলিভিশনের সিইও আবু তাহেরসহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, মেলা কমিটির কর্মকর্তা, প্রবাসী কবি, লেখক, সাংবাদিক ও সুধীরা উপস্থিত ছিলেন। মেলা পুরো সময় জুড়ে ছিল নানা বিষয়ে আলোচনা, আবৃতি, গান পরিবেশনাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান।

নিইউয়র্কের একুশের বইমেলার বিশেষ আকর্ষণ ছিলো এবারের মেলায় লেখকরাই স্টল দিয়েছিলেন। পাঠকরা সরাসরি লেখকদের কাছ থেকে বই কিনেছেন, অটোগ্রাফ নিয়েছেন। লেখক—পাঠক একত্রে ছবিও তুলেছেন। যার মধ্যদিয়ে ‘লেখক—পাঠক সংযোগ’ আরো শক্তিশালী হয়েছে। মেলায় যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত লেখক—লেখিকাদের বইয়ের প্রদর্শনী ও বিক্রয়ের জন্য কয়েকটি স্টল বসানো হয়। প্রবাসী বাংলাভাষীদের মধ্যে এই মেলা বেশ আগ্রহের সৃষ্টি করে বলে। হিমাংসের অনেক নিচে মাইনাস তাপমাত্রায়ও অনেক পাঠক ও বইঅনুরাগী মেলায় উপস্থিত হয়ে বই কেনেন।

মেলার প্রথম দিনের কর্মকান্ডের মধ্যে ছিল ‘একুশ ও জাগরণের গান’ এবং ‘কাজী জহিরুল ইসলাম রচিত একুশের কাব্যালেখ্য ‘রক্তের দাম দিয়ে কিনেছি মায়ের ভাষা’ পরিবেশনা। এতে সুমন শামসুদ্দিন, দিমা নেফারতিতি, আহসান হাবীব, মুন্না চৌধুরী ও সৈয়দ মাসুদুল ইসলাম টুটুল অংশ নেন। এদিনের বিভিন্ন আলোচনায় আরো অংশ নেন সৈয়দ ফজলুর রহমান, ডা. সজল আশফাক প্রমুখ। সবশেষের সঙ্গীতানুষ্ঠানে প্রবাসের শিল্পী ফারহানা তুলিম, সৌভিক রায় চৌধুরী, ঋত্যুজা, রুমা চৌধুরী, সেলিম ইব্রাহীম ও মিতা হোসেন সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে ছিল সেমিনার, আলোচনা, আবৃত্তি, একক বক্তৃতা, স্বরচিত কবিতা পাঠ সহ আরও ছিলো সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এদিনের অনুষ্ঠানমালার শুরুতেই সৈয়দ আল আমীন রাসেলের পরিচালনায় ‘আমাদের অভিবাস জীবন’ শীর্ষক সেমিনার এবং রওশন হকের সঞ্চালনায় শিশুদের ছাড়া/কবিতার অনুষ্ঠান ‘ভোরের পাখি’ পরিবেশিত হয়। এরপর সুমন শামসুদ্দিনের সঞ্চালনায় ‘শব্দরণ্যের নিবিড় গহনে’ শীর্ষক স্বরচিত কবিতা পাঠনের অনুষ্ঠানের প্রবাসী লেখকরা অংশ নেন। এছাড়াও ‘বাংলা কবিতার জনপ্রিয়তা কেন কমে যাচ্ছে?’ শীর্ষক বিশেষ আলোচনা হয়। ‘প্রবাস জীবন—স্বদেশ ভাবনা’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় ডা. মোহাম্মদ হামিদুজ্জামান, অধ্যাপক ড. মোহসীন পাটোয়ারী ও লেখক—সাংবাদিক সাঈদ তারেক। সঞ্চালনায় ছিলেন ফখরুল আলম। একই দিন ভ্রমণ বিষয়ক অনুষ্ঠান ‘পৃথিবীর পথে পথে’ বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন ভ্রমণ লেখক যথাক্রমে হাবিব রহমান, আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু ও কাজী জহিরুল ইসলাম। সঞ্চালনায় ছিলেন জিএম ফারুক খান।

এছাড়া যুগল আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘একান্তে আমরা দুজন’ শীর্ষক পর্বে আবৃত্তি করেন দিমা নেফারতিতি ও আহসান হাবিব। এছাড়াও ‘গুরু শ্রী চিন্ময়ের দ্বিভাষিক কবিতা পাঠ’ আলোচনায় অংশ নেন দিমা নেফারতিতি, যামিনী ইয়ং ও স্বাতী চক্রবর্তী। বই নিয়ে আলোচনার অনুষ্ঠান ‘বই—কথা—কও’ অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন ড. আবুল কাশেম, দেওয়ান নাসের রাজা ও আব্দুল্লাহ জাহিদ। সঞ্চালনায় ছিলেন সোহেল হামিদ। আরো ছিলো আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘মুগ্ধ উচ্চারনের সৌরভ’, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ‘প্রচ্ছদের ভেতরে’, ‘আমি কেনো শিল্পের অনুরাগী’ শীর্ষক আলোচনা ও সঙ্গীতানুষ্ঠান। বিভিন্ন পর্ব সঞ্চালনায় ছিলেন ইমাম চৌধুরী ও শেলী জামান খান।
মেলার শেষ দিন রোববার পাঠক—দর্শকদের উপস্থিতি ছিল বেশি। তাদের আগণে মেলা প্রাঙ্গণ ছিলো কানায় কানায় পরিপূর্ণ। এদিন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা সহ সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী মেলায় যোগ দেন। দিনের বিশেষ আকর্ষণ ছিলো সিনিয়র সাংবাদিক—লেখক হাসান ফেরদৌসের ‘বুদ্ধিজীবী ও স্বৈরাচার’ শীর্ষক একক বক্তৃতা।

শেষ দিনের শুরুতে ‘অভিবাসী ও আমাদের অধিকার’ শীর্ষক সেমিনার সঞ্চালনা করেন কাজী ফৌজিয়া। এরপর ভায়লা সালিনা মির্জার সঞ্চালনায় ছিলো শিশুদের অনুষ্ঠঅন ‘আমরা সবাই রাজা’। রওশন হকের সঞ্চালনায় ‘শব্দরণ্যের নিবিড় গহনে’ শীর্ষক স্বরচিত কবিতা পাঠনের অনুষ্ঠানের প্রবাসী লেখকরা অংশ নেন। রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে বিশেষ আলোচনার অনুষ্ঠান ‘তোমার আপন হাতের দোলে’—তে অংশ নেন মিতা হোসেন, মুক্তি জহির ও সোহানা নাজনীন। এই পর্ব সঞ্চালনায় ছিলেন এইচ বি রিতা। এরপর ‘শিল্পাঙ্গনের নাটক’ শিরোনামে পরিবেশিত হয় সৈয়দ শামসুল হকের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’। মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের পরিচালনায় এতে অভিনয় করেন শাহরুখ তাসলিম, সোনিয়া পান্না, শফিউল আলম, আহসান উল্লাহ, নুসায়বাহ কবির, স্বপন কবির ও মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। এছাড়াও ছিলো ‘বাংলা নাটকের সেকাল—একাল’, বই নিয়ে আলোচনার অনুষ্ঠান ‘বই—কথা—কও’, একক গান, আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘মুগ্ধ উচ্চারনের সৌরভ’, নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ‘প্রচ্ছচদের ভেতরে’ এবং ‘নজরুলের রসবোধ’ বিশেষ আলোচনা। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন কাজী জহিরুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন সিনিয়র সাংবাদিক ও লেখক সাঈদ তারেক, সাংবাদিক ইমরান আনসারী ও কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট নূরুল হক। সবশেষে ছিলো সঙ্গীতানুষ্ঠান। এতে প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী চন্দন চৌধুরী, মরিয়ম মারিয়া প্রমুখ সঙ্গীত পরিবেশন করেন। বিভিন্ন পর্ব সঞ্চালনায় ছিলেন আহসান হাবিব, সেলিম ইব্রাহীম ও জেবুন্নেসা জোৎস্না। বইমেলা উপলক্ষ্যে ‘অক্ষর’ নামে একটি স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়।

কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদা তার বক্তব্যে বইমেলার সফলতা কামনা করে বলেন, এমন আয়োজন প্রবাসে বাংলা ভাষা ও শিল্প—সাহিত্য বিকাশে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি কবি—সাহিত্যিক—লেখকদের অনুপ্রাণিত করবে।
মেলার উদ্যোক্তা কাজী জহিরুল ইসলাম বলেন, স্বল্প পরিসরে এমন একটি আয়োজনে প্রবাসীদের বিপুল সাড়া আমাদের মুগ্ধ করেছে, অনুপ্রাণিত করেছে। আমরা সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আশাকরি সবার সহযোগিতা নিয়ে প্রতিবছর ‘একুশের মেলা’ আয়োজন করা সম্ভব হবে।

আহ্বায়ক ফখরুল আলম বলেন, মাত্র ১৮ দিনের আয়োজনে এই মেলা আয়োজন করতে হয়েছে। নানা ভুল—ত্রুটি সত্ত্বেও সবার সহযোগিতায় মেলা সফল হয়েছে। এজন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। আগামী মেলায় সবার অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। সদস্য সচিব আহসান হাবিব বলেন, সবার কাছ থেকে দাবি উঠেছে নিয়মিত মেলা আয়োজন করার। আশাকরি আগামী মেলা আরো বড় পরিসরে আয়োজিত হবে।

Facebook Comments Box

Posted ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০২ মার্চ ২০২৫

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com