বুধবার ২৯শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নিউ ইয়র্কে ৫ম বাংলাদেশ সম্মেলনে স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ

বিভক্তির রাজনীতি আর নয়, এখন যুদ্ধ হবে একতা, ভালোবাসা আর দেশপ্রেমের

ডেস্ক রিপোর্ট   |   বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩   |   প্রিন্ট   |   77 বার পঠিত

বিভক্তির রাজনীতি আর নয়, এখন যুদ্ধ হবে একতা, ভালোবাসা আর দেশপ্রেমের

 


বাংলাদেশি শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐহিত্য সংরক্ষনের প্রত্যয় নিয়ে নিউইয়র্কের লাগোর্ডিয়া ম্যারিওট হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুদিনব্যাপী পঞ্চম বাংলাদেশ সম্মেলন। ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ অনুষ্ঠিত ওই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, গ্লোবাল পিস অ্যামব্যাসেডর স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ। দু’দিনেই বাংলাদেশ ও বাংলাদেশির জীবন বাস্তবতার আলোকে দিক নির্দেশনাধর্মী বক্তব্য রাখেন তিনি। তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশ ও সারাবিশ্বের বাংলাদেশি জনগোষ্ঠিকে ঐক্যবদ্ধ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে বাংলাদেশিদের মধ্যে বিভক্তি, হিংসা ও হানাহানির দলীয় রাজনীতি পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশ বাতাস নয়। দেশ হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমরা এক হই। তাহলে কেন আমরা বিভক্তির সংস্কৃতি ও রাজনীতি পোষন করবো? যারা আমাদের বিভক্ত করে আমরা কেন সেই রাজনৈতিক দলনেতা ও দলগুলিকে অনুসরণ করবো? যারা একে অন্যের বিরুদ্ধে হত্যায় লেলিয়ে দেয়, ঘৃণায় লেলিয়ে দেয়, পারিস্পারিক বিভক্তিকে অনিবার্য করে তোলে, আমরা তাদের আর সমর্থন করবো না। এখন জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষায় অপরিহার্য হয়ে উঠেছে আমাদের একতা’র।
নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠক ও বাংলাদেশ সম্মেলনের আয়োজক আলমগীর খান আলমের সভাপতিত্বে দুদিনব্যাপী বাংলাদেশ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী পবন দাস বাউল ও তার দল। এছাড়া সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী সেলিম চৌধুরী, প্রয়াত শিল্পী খালিদ হাসান মিলুর সন্তান শিল্পী প্রতীক হাসানসহ নিউইয়র্কে বসবাসকারী বিশিষ্ট বাংলাদেশি শিল্পীরা।

প্রথম দিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমেরিকার বুকে বাংলাদেশের নামে এই সম্মেলন আমাকে নয় শুধু গোটা বাংলাদেশি সমাজ ও আমাদের নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে। এর আয়োজকরা যেভাবে একতার ঢেউ তুলে চলেছে আমি তাকে স্বাগত জানাই। যখন আমেরিকায় বাংলাদেশিদের বিভক্ত রূপ দেখানোর প্রতিযোগিতা চলছে। বিভিন্ন স্থানে ফোবানা’র ছয়টি অনুষ্ঠান হচ্ছে। আমাদের ভাই ও বন্ধুরা, তাঁরাও আমাদের আপনজন, এভাবে বাংলাদেশের বিভক্ত রূপ দেখিয়ে কী আনন্দ পেয়েছেন আমি জানি না। যেভাবে রাজনীতিতে আমাদের বিভক্ত করা হয়, এক গ্রুপ দিয়ে আরেক গ্রুপকে হত্যা করার জন্য লেলিয়ে দেয়া হয়, সেভাবেই আমরা বিভক্ত হয়ে পড়ছি। এর বিপরীতে বাংলাদেশ সম্মেলন এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ তার বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর প্রতি তার সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা ও অভিবাদন জানিয়ে বলেন, তার অধিনায়কত্বে যুদ্ধ করে আমরা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলাম। অথচ যুদ্ধের রাজনীতিতে তাকে হারিয়ে দেয়া হয়। আমরা হেরে যাই। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন বলেন, জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী ৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর আগরতলা থেকে হেল্কপ্টার যোগে যখন কুমিল্লায় গিয়ে ভারতীয় জেনারেলের সঙ্গে দেখা করেন, তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের যোদ্ধাদের পক্ষ থেকে তাকে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত করা হয় ও সেখান থেকে ফেরত পাঠানো হয়। এটা হচ্ছে যুদ্ধের রাজনীতি। এই যুদ্ধে আমরা হেরে গেলাম। আমরা আর আমাদের জেনারেলকে পাইনি। তিনি বলেন, জেনারেল আপনি নেই, আমি আবু জাফর মাহমুদ এখন জেনারেল। আপনার নেতৃত্বের শক্তি ধারণ করি। আমরা আগামীর যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত।
স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ বাংলাদেশ সম্মেলনে উপস্থিত শিল্পীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ তাদের বড় বড় শিল্পীদের কুটনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগিয়ে থাকে। বহির্বিশ্বে একটি দেশের পরিচিতিসহ বিভিন্নমুখী উৎকর্ষের প্রশ্নে শিল্পীদের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা সে কাজটি করতে পারিনি। আমাদের রাষ্ট্র ও সরকার এ পর্যন্ত সে চিন্তাটি করেনি। শিল্পীদের দায়িত্বটি অনেক বড়। তাদের কুটনৈতিক কাজে মনোযোগী হতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশি যেখানেই থাকুক আমাদের মধ্যে একতা সৃষ্টির কাজে সবাইকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। এই কাজে আর দেরি করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, যে একতা একদিন আমাদের যুদ্ধ শিখিয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে যে অনুপ্রেরণা দিয়েছে, সেই একতার কাছে ফিরতে হবে। আমাদের সামগ্রিক মুক্তির জন্য একতার কোনো বিকল্প নেই।

আবু জাফর মাহমুদ বলেন, এই আমেরিকায় আমরা যখন সারা পৃথিবীর নেতা, আমেরিকা যখন নের্তৃত্ব করে আমরাও নের্তৃত্ব করি। দৃষ্টিভঙ্গিতে আমরা যেন পরিস্কার থাকি। যুদ্ধের সময় আমরা যখন যুদ্ধ করেছি, তখন ঢাকার মিরপুরে বিহারিরা ছিল। বিহারিরা এই ভূমির সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করে বাংলাদেশের প্রত্যক্ষ বিরোধীতা করেছে। এই আমেরিকায় বসবাস করেও অনেকে আমেরিকাকে গালি দেয়। ঠিক ওই বিহারির মতো। আমি তেমন বিহারি নই। বাংলাদেশে থেকে যারা আমাদেরকে এখানে বিভক্ত ও বিভ্রান্ত করছে যে রাজনৈতিক দলনেতা আমাদেরকে উল্টোপথে ঠেলে দেয়। পৃথিবীর দেশে দেশে দেশের সংগঠনের শাখা কমিটির অনুমোদন দেয়, তারা দেশদ্রোহী ও মানবতাবিরোধী; বাংলাদেশের জন্য মুনাফেক।

দুদিনব্যাপী বাংলাদেশ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে স্যার ড. আবু জাফর মাহমুদ মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী, সকল সেক্টর কমা-ার, সাব সেক্টর কমা-ার, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তার প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের সকল কর্মীদের মাধ্যমে ফুলেল শ্রদ্ধার্ঘ জানান।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:১৯ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

nykagoj.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  
সম্পাদক
আফরোজা ইসলাম
কন্ট্রিবিঊটিং এডিটর
মনোয়ারুল ইসলাম
Contact

+1 845-392-8419

E-mail: nykagoj@gmail.com